ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়ক নদীতে বিলীন

মাতামুহুরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সড়ক। ছবিটি কোনাখালীর হাইদ্যারডিয়া থেকে তোলা। ছবি : চকরিয়া নিউজ

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

মাতামুহুরী নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন চকরিয়ার উপকূলীয় কোনাখালী বাঘগুজারা ভায়া বদরখালী সড়ক কাম বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ব্যস্ততম বেড়িবাঁধ কাম সড়কটির বিদ্যমান বাকি অংশও দিন দিন নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা সড়কটি টেকসইভাবে সংস্কার করার জন্য এলাকাবাসীকে বার বার আশ্বাস দিলেও কার্যত তা লোক দেখানো! অতিসম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে কয়েক ফুট জোয়ারের পানিতে নতুন করে বেড়িবাঁধ ও সড়কটির বেশকিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যায়।

জানা গেছে, সড়কটি নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গত তিনবছর ধরে। সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে উপকূলীয় পেকুয়া, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালীর কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০১৫ ও ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায়। ওই সময় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে সড়কটির বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখন যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভাঙন রক্ষায় উদ্যোগ নিত তাহলে সড়কটির এই অবস্থা হত না।

তাঁরা আরো অভিযোগ করেন, সড়কটির এই দুরবস্থা স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা এবং এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবগত থাকলেও তাঁরা কোনো উদ্যোগ নেননি। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে।

কোনাখালী ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বাসিন্দা চকরিয়া নিউজকে বলেন, বর্তমানে সরকারের দলীয় একজন করে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। তাঁরা চাইলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ও ব্যস্ততম সড়কটি টেকসইভাবে মেরামত করাসহ যান চলাচলের উপযোগী করতে উদ্যোগ নিতে পারতেন। কিন্তু তাঁরাও ক্ষমতার মসনদে বসে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়টি বেমালুম ভুলে গেছেন। এরই মধ্যে সামনে চলে আসছে বর্ষাকাল। এর আগে যদি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণ করা যায় তাহলে দুর্ভোগ লাঘব হবে মানুষগুলোর।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সড়কটি গত তিন বছর ধরে মাতামুহুরী নদীগর্ভে বিলীন হতে হতে সামান্যটুকু বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষার আগে যদি মাতামুহুরী নদীতীরের বেড়িবাঁধ কাম সড়কটি নতুন করে নির্মিত না হয় তাহলে বরাবরের মতোই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।’

উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বশর  চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কোনাখালী ইউনিয়নের বাঘগুজারা থেকে বদরখালী পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে কোনাখালী বাঘগুজারা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীতীরের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ একেবারেই নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে তিন বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে না পারায় বিকল্প পথে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।’

ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, মাতামুহুরী নদীতীরের বেড়িবাঁধ কাম সড়কটির বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পুরো সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির কোনো তৎপরতা নেই সড়কটি রক্ষায়। ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে অভ্যন্তরীণ জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ঢেমুশিয়া ও কোনাখালীর একাধিক পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট হয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত যান চলাচল উপযোগী থাকলেও কোনাখালীর বাঘগুজারায় মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত সেতু থেকে বাংলাবাজার হয়ে বদরখালী বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষেই সড়কটি বিদ্যমান। এই অবস্থায় বর্ষাকালে বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারে প্রতিবছর বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আদৌ সড়কটি রক্ষা করা যাবে কি-না সেই সংশয় কাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

এ ব্যাপারে এলজিইডির চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বেড়িবাঁধ কাম এই সড়কটি পিচঢালা করতে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল দুইবার। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধটি টেকসইভাবে তৈরি করে না দেওয়ায় এলজিইডি সেখানে কোনো কাজ করতে পারছে না। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে।’

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীতীরের ব্যস্ততম কোনাখালী বাঘগুজারা ভায়া বদরখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি নতুন করে নির্মাণ করতে সরেজমিন পরিদর্শন এবং প্রকল্প প্রোফর্মা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলেই অচিরেই কাজ শুরু করা যাবে এই বেড়িবাঁধটির। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

পাঠকের মতামত: